নতুন পোষ্টের বিজ্ঞপ্তি পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন!

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত | কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হোটেল ভাড়া সহ ভ্রমণ গাইড

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

সাগর কন্যা নামে খেত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (Kuakata Sea Beach) যার সৌন্দর্যের শেষ নেই। অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতটির অবস্থান পটুয়াখালী জেলার, কলাপাড়া উপজেলায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়টিই দেখা যায়।  দেখে মনে হয় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বুকে আলোক বিন্দুর মতো দূর সমুদ্রে সূর্য উদিত হচ্ছে। অন্যদিকে উথাল পাথাল ঢেউ সমুদ্র তীরে আছড়ে পড়ার দৃশ্য। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। সমুদ্র সৈকতের পাশে ১৫০ একরের বেশি নারকেল বাগান রয়েছে যা "নারিকেল কুঞ্জ" নামে পরিচিত। মনোরম ঝাউ বাগান রয়েছে সৈকতের পূর্ব দিকে। ১৫ হেক্টর জমিতে ঝাউ বাগানটি গড়ে উঠেছে। আরোও রয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে চরঙ্গামতি বনাঞ্চল, যেখানে রয়েছে কেওড়া, ছৈলা ও কড়াই বাগান। একটি নয়নাভিরাম লেক রয়েছে এই বাগানে।

ঝাউবন থেকে কুয়াকাটার সূর্যোদয় ভালোভাবে দেখা যায় বলে সবাই সেখানে চলে যায়।  সমুদ্রের বুকে কিভাবে সূর্য উদিত হয় তা দেখার জন্য অনেক মানুষ ঝাউবনে একত্রিত হয়। আপনি হেটেই ঝাউবনে যেতে পারবেন এবং প্রকৃতিকে কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন। এই বনের পাশেই রয়েছে একটি ইকো পার্ক, যেখানে পর্যটকরা পিকনিক করে থাকে। শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা যায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে।

কুয়াকার কিছু দর্শণীয় স্থান

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি এখানে আরও কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থান রয়েছে, যার কারণে প্রতি বছর পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে এখানে। কুয়াকাটায় আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফাতরার বন, শুটকি পল্লী, ক্রাব আইল্যান্ড বা লাল কাঁকড়ার দ্বীপ, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, চর গঙ্গামতী, ঝাউ বন, রূপালী দ্বীপ, বৌদ্ধ বিহার, রাখাইন পল্লী, মিষ্টি পানির কূপ, বার্মিজ মার্কেট, ঝিনুক বীচ, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর, পাখি মারা পানি যাদু ঘর, স্বপ্ন রাজ্য ইত্যাদি।

রাখাইন পল্লী

এখানে রয়েছে আদিবাসী রাখাইনদের স্থাপথ্য নিদর্শন। অনুমান করা হয় ১৮ শতকে মুঘল শাসকদের দ্বারা বার্মা থেকে বিতারিত হয়ে আরকানীরা এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। তখন তাদের সুপেয় পানির অভাব মিটাতে তারা প্রচুর কুয়ো বা কুপ খনন করেন, সেই থেকে এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় কুয়াকাটা। সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের পর থেকে শুরু হয়েছে এই রাখাইন আদিবাসীদের পল্লী। এখানে আসলে দেখতে পারবেন রাখাইন নারীদের হস্তে বুনা বাহারি রংয়ের কাপড়।

ফাতরার বন

ফাতরার বন এমন একটি বন যেখানে সুন্দরবনের সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে কিন্তু কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। কিছুটা হলুদ বর্ণের গাছপালা দেখতে পাবেন এখানে, রয়েছে বনের মধ্য দিয়ে পায়ে হাটার পথ, যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। সৈকতের পশ্চিমে নদী পার হলেই এই বন দেখা যায়। মাঝে মাঝে বুনো শুকরের দেখা মিলে এখানে। ইঞ্জিন নৌকায় করে কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হবে।

শুটকি পল্লী

এই গ্রামটি সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে অবস্থিত যেখানে সাগরের পাশে মাছ ধরা ও শুটকি তৈরি করা হয়। এই শুটকি প্রক্রিয়াকরণ নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে। কুয়াটাকা সমুদ্র সৈকত থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে এই শুটকি পল্লী। শতাধিক ব্যবসায়ী শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরি করে এখানে। মাছ কেটে শুটকিজাত করার দৃশ্য দেখার জন্য পর্যটকরা ভিড় জমায় এই শুটকি পল্লীতে।

ক্রাব আইল্যান্ড

ক্রাব আইল্যান্ড লাল কাঁকড়া বসবাসের জন্য খুবই জনপ্রিয়। ক্রাব আইল্যান্ড বা কাঁকড়ার দ্বীপটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকে গঙ্গামতি জঙ্গল পার হয়ে আরও সামনে গেলে দেখা মিলবে এই দ্বীপটির। এখানে সকালে আসলে লাল কাঁকড়ার মিছিল দেখতে পাবেন। বছরের শেষ দিকে লাল কাঁকড়া দেখা যায় এই দ্বীপে।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার উপায়

পদ্মা সেতু হওয়াতে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা যেতে এখন অনেক সহজ। ঢাকা থেকে ইচ্ছে করলে দিনে দিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করে আসা সম্ভব। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটার দূরত্ব ২৯৩ কি.মি এবং বরিশাল থেকে ১০৮ কি.মি। যাত্রাবাড়ি থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে প্রায় ৫ ঘণ্টা এবং বরিশাল থেকে সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা। ইচ্ছে করলে আপনি নৌপথে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে পৌঁছে যেতে পারেন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায়। সেখান থেকে কুয়াকাটাগামী গাড়ি পেয়ে যাবেন, সৈকতে পৌঁছাতে সময় লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত হোটেল ভাড়া ও থাকার ব্যবস্থা

এখানে থাকার জন্য পর্যাপ্ত আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেল গুলোর ভাড়া তেমন বেশি না, ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। চাইলে আপনি আরও দামি হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারেন। তবে এখানে হোটেল ভাড়া তুলনামূলক কম। কুয়াকাটার হোটেলগুলোতে আপনি পরিবারসহ বা সিঙ্গেল যেকোন ভাবে থাকতে পারবেন। হোটেল বুক করার আগে অবশ্যই বুকিং সময় কয়টা থেকে কয়টা জিজ্ঞেস করে নিন। কোন কিছু খাবার আগে দাম জিজ্ঞেস করতে লজ্জবোধ করবেন না।

খাবারের ব্যবস্থা

অতিথিদের খাওয়ার জন্য আবাসিক হোটেলে নিজস্ব খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। লেবুর চরের কাঁকড়া ভুনা এখানে অনেক জনপ্রিয় খাবার। সমুদ্র সৈকত এলাকায় বিভিন্ন মাছের দোকান রয়েছে, যেখানে আপনি তাজা মাছ খেতে পারবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের লোনা পানির মাছ ও মাছের শুটকি খাওয়া যাবে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রচলিত সব খাবারের ব্যবস্থাতো রয়েছেই।

টিপস

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আপনি মোটরসাইকেলসহ গাইড পাবেন যারা আপনাকে সৈকতের কাছাকাছি আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে নিয়ে যাবে। গাইডদের সাথে পর্যটক স্থানগুলোর ছবিসহ অ্যালবাম রয়েছে, যাতে আপনার পছন্দমত যায়গাগুলো বাছাই করে ভ্রমণ করতে সুবিধা হয়। তাদেরকে ঘণ্টা হিসেবে ভাড়া করতে পারবেন। একজন গাইড তার মোটরসাইকেলে একসাথে দুইজন পর্যটক নিয়ে যেতে পারেন। অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এবং এর আশেপাশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে একজন গাইড খুবই উপকারী।

আরও পড়ুন: কক্সবাজার হোটেল ভাড়া ও মোবাইল নাম্বার

আরও পড়ুন: কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ

About the Author

আমাদের এই ওয়েব সাইটে জানা ও অজানা, ভ্রমণ, রেসিপি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরামর্শ, বিভিন্ন প্রাকারের হিসাব নিকাশ ও আবেদন, ভূমি জরিপ এবং দৈনন্দিনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য দিয়ে থাকি। এই সকল তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কালেক্ট করা হয়।
কুকি সম্মতি
এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে একটি ভালো ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দিতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে, আপনি কি কুকিজ ব্যবহারে সম্মত আছেন?
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.