ছবি: সংগৃহীত |
জাফলং সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাফলং (Jaflong) কে প্রকৃতির কন্যা বলা হয়। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান। এটি ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা প্রকৃতির দানে রুপের পসরা সাজিয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। উঁচু উঁচু পাহাড়ে মেঘের খেলা, পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানির ধারা, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ জাফলংকে এক অনন্য স্থান দিয়েছে। জাফলং এক বহুরূপী মায়াবিনি, একেক ঋতুতে একেক রুপের প্রকাশ ঘটায়, যা পর্যটকদেরকে ভ্রমণের জন্য সারাবছরই কাছে টানে।
জাফলং কখন যাবেন?
জাফলং যাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বর্ষাকালে। তখন এর পূর্ণ সৌন্দর্য ফুটে উঠে। তবে মাঝ বার্ষায় না যাওয়া ভালো, তখন বন্যায় সব কিছু ডুবে যায়। বর্ষার শুরুতে বা শেষে যাওয়া ভালো। তখন জাফলং এর সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। তবে শীতকালেও যেতে পারেন। শীতকালে গেলে এর আরেক রূপ দেখতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন ফাজলং
প্রথমে আপনাকে আসতে হবে চায়ের রাজ্য সিলেটে। সিলেটে আপনি বিভিন্ন উপায়ে আসতে পারেন। বাস, ট্রেন এমনকি আপনি আকাশপথেও সিলেট আসতে পারেন। সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ঢাকার ফকিরাপুল বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, সৌদিয়া, ইউনিক, এনা ও লন্ডন এক্সপ্রেস অন্যতম। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম থেকে গ্রীনলাইন, এনা, সৌদিয়া ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ অনেক পরিবহন রয়েছে সিলেট যাওয়ার জন্য।
ট্রেনে সিলেট যেতে চাইলে ঢাকা কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে যেতে পারবেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকেও সিলেটগামী ট্রেন ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা প্রায়।
আর সবচেয়ে দ্রুত সিলেট যেতে চইলে আপনাকে বেঁছে নিতে হবে আকাশপথ। চট্টগ্রামের শাহ-আমানত বিমানবন্দর বা ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেট যেতে পারেন।
সিলেট থেকে যেভাবে জাফলং যেতে হবে
সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা অথবা মাইক্রোবাসে করে জাফলং যাওয়া যায়। কদমতলী থেকে জাফলংগামী বাস ছেড়ে যায়। আপনার সুবিধামত সিলেট শহরের সোবহানীঘাট থেকেও বাসে করে জাফলং যেতে পারবেন। রিজার্ভ গাড়িতে যেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে বন্দরবাজার শিশুপার্কের সামনে। এখান থেকে লেগুনা, সিএনজি অথবা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করতে পারবেন। কয়েকজন এক সাথে ঘুরতে গেলে গাড়ি রিজার্ করে নেওয়া ভাল। এতে করে যাওয়ার পথে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ ঘুরে দেখতে পারবেন। তবে কি কি দেখতে চান তা গাড়ি ঠিক করার আগে জানিয়ে দরদাম করে নিবেন। সিলেট থেকে জাফলং এর দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার প্রায়। সিলেট থেকে যেতে সময় লাগবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। বর্তমানে জাফলং যাওয়ার বাস্তা অনেক ভালো। মামার বাজার না গিয়ে গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প হয়ে জাফলং জিরো পয়েন্ট যাওয়ার রাস্তাটি অনেক জনপ্রিয়।
থাকার ব্যবস্থা
জাফলং ভ্রমণকারীরা সাধারণত রাত্রিযাপনের জন্য সিলেট শহরেই চলে আসে। যেহেতু এখান থেকে সিলেটের অন্যান্য ভ্রমণ স্পটে যাওয়া সুবিধাজন। এখানে বেশিরভাগ হোটেলগুলো শাহজালাল মাজারের আশেপাশ ঘিরে। দরগা গেট থেকে শুরু করে তালতলা, অম্বরখানা, লামাবাজার, কদমতলী পর্যন্ত বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল রয়েছে। কম খরচে থাকতে চাইলে দরগা গেট এলাকার হোটেলগুলোতে রাত্রিযাপন করতে পারেন। আর যদি ভালোমানের আবাসিক হোটেলে থাকতে চান, তাহলে হলি গেইট হোটেল, হলি ইন, লা ভিস্তা, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল বেছে নিতে পারেন।
লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে রোজ ভিউ হোটেল, নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, গ্র্যান্ড প্যালেস, নাজিমগর রিসোর্ট সহ আরও কিছু হোটেল। হোটেল বোক করার আগে অবশ্যই কি কি সুজোগ সুবিধা রয়েছে জেনে নিবেন এবং বোকিং টাইম কয়টা থেকে কয়টা জেনে নিবেন।
জাফলং এলাকায়ও আপনি ইচ্ছে করলে রাত্রিযাপন করতে পারেন। মামার বাজার এলাকায় হোটেল প্যারিস এবং জাফলং ইন হোটেল সহ আরো কিছু রেস্ট হাউজ রয়েছে। ইচ্ছে করলে সরকারী রেস্ট হাউজেও আপনি থাকতে পারবেন, তবে এর জন্য আপনাকে পূর্ব অনুমতি নিতে হবে।
জাফলং এর কাছাকাছি কিছু দর্শনীয় স্থন
কিছু সতর্কতা:
➤ এটি সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায়, সীমান্ত এলাকার নির্দেশনা মেনে চলুন।
➤ পানিতে নামার সময় সাবধান থাকুন, কারণ পাথর উত্তোলনের ফলে কোথাও কোথাও বেশ গভীর।
➤ প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
➤ গাড়ি রিজার্ভ করার সময় দরদাম ঠিক করে নিন।
আরও পড়ুুন: পাহাড়ের রানী দার্জিলিং এর দর্শনীয় স্থান ও যাওয়ার উপায়