বাংলায় তথ্য ভাণ্ডার

তথ্য সংগ্রহে আমরা সর্বদা তৎপর

পাহাড়ের রানী দার্জিলিং এর দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় এবং ভ্রমণ গাইড

দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দার্জিলিং শহর। দার্জিলিং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাজ্যের একটি জেলা শহর। দার্জিলিং জেলা ভূ-পৃষ্ট থেকে ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। যে কারণে এখানে প্রায় সারা বছর জুড়েই ঠাণ্ডা থাকে। এখানে হাতের নাগালে মেঘেরা খেলা করে।  দার্জিলিং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান এবং রেলওয়ে সবকিছু মিলিয়ে মেঘের স্বর্গরাজ্য হিসেবে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও টাইগার হিলের  সূর্যোদয় দেখার জন্য  দার্জিলিংয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করে। ব্রিটিশ রাজ্যের সময় থেকেই দার্জিলিং এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি তখন ব্রিটিশদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ছবির মত সুন্দর দেখতে এখানের হিল স্টেশনটি। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দার্জিলিং শহরকে আরও রাজকীয় করে তুলেছে পর্যটকদের নিকট। বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখা যায়। মনোরম সবুজ চা বাগানে ঘেরা শহর পর্যটকদের হৃদয় মন কেড়ে নেয়। তাইত বারবার পর্যটকরা ছুটে যায় দার্জিলিং এর হৃদয়কাড়া এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। 

যখন দার্জিলিং যাবেন

বসন্ত ও শরৎকাল দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়। বসন্ত কালের মার্চ থেকে এপ্রিল এবং শরৎকাল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সময়টুকু দার্জিলিং ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। দবে বর্ষকালে না যাওয়াই ভালো। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে রাস্তায় ভোগান্তিতে পরতে পারেন। 

যাতায়াত ব্যবস্থা

প্রথমে আপনাকে ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভ্রমণ ভিসা নিতে হবে। তারপর ঢাকার গাবতলী বাসে করে বা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দার্জিলিং যেতে হবে। ঢাকার গাবতলী থেকে প্রতিদিন বেশ কিছু এসি ও নন এসি বাস দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তার মধ্যে হানিফ, শ্যামলী বাস অন্যতম। শ্যামলী বাসের ভাড়া একটু বেশি পড়বে, কারণ তারা শিলিগুড়ি পর্যন্ত টিকিট করে থাকে। তবে বর্ডার পর্যন্ত শ্যামলী আপনাকে এসিতে করে নিয়ে যাবে, কিন্তু বর্ডারের অপর প্রান্ত থেকে ওরা আপনাকে কোন গাড়িতে করে নিয়ে যাবে তার কোন ঠিক নেই। কারণ ভারতের প্রবেশদারে তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, ওটা নিয়ন্ত্রন করে দালালরা। ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত তারা আপনাকে যে বাসে করে নিয়ে যাবে, আপনাকেও ঠিক সেই বাসেই যেতে হবে। এই জন্য বসচেয়ে বেটার হয় সীমান্ত পর্যন্ত এসি বাসে যাওয়া। বাকিটুকু আলাদাভাবে বাসের কন্ডিশন দেখে ঠিক করা। বেশিরভাগ বাস রাত ৮টার সময় ঢাকা থেকে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বুড়িমারীতে সকাল ৬-৭টার মধ্যেই বাস পৌঁছে যাবে। সকালের নাশতাটা বাংলাদেশে সেরে তারপর দুই দেশের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করুন। ইমিগ্রেশন শেষ করে যখন চ্যাংড়াবান্ধায় পৌঁছে যাবেন, তখন দেরী না করে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া জিপগুলোতে চেপে বসুন। কেননা আপনাকে বিকেলের মধ্যে অবশ্যই দার্জিলিং পৌঁছাতে হবে। তাই এখানে সময় নষ্ট করা যাবে না। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি যেতে সময় লাগবে প্রায় তিন ঘণ্টা, সবকিছু ঠিক থাকলে দুপুরের মধ্যেই শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবেন। সেখানে দুপুরের খাবারটা সেরে নিতে পারেন। তবে দেরি হয়েগেলে হালকা নাস্তা করেই দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। দেশের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভারতীয় মোবাইল সিম কিনে নিতে পারেন। সর্বোচ্চ ৩ঘন্টার মধ্যেই স্বপ্নের রাজ্য দার্জিলিংয়ে পৌঁছে যেতে পারবেন। 

কলকাতা থেকে দার্জিলিংয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা

ট্রেনে কলকাতা থেকে দার্জিলিং যেতে চাইলে পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টার ফেয়ারলি প্যালেস থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। জলপাইগুড়ি রেলওয়ে স্টেশন দার্জিলিংয়ে যাওয়ার সবচেয়ে কাছের স্টেশন। জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৮৮ কি.মি। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটের সময় কলকাতার শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন থেকে দার্জিলিং মেইল ট্রেন ছেড়ে যায়। জলপাইগুড়ি পরদিন সকাল ১০টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে রিকশায় শিলিগুড়ি জিপ স্টেশনে এসে দার্জিলিংগামী পিজে করে দার্জিলিং যেতে হবে। 

থাকার ব্যবস্থা

দার্জিলিংয়ে থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেল পার্কলেন তার মধ্যে অন্যতম। তবে মনে রাখবেন রাত আটটার আগেই আপনাকে হোটেল বুকিং এবং রাতের খাওয়া শেষ করতে হবে। কারণ রাত ৮টার পরে এখানের সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। হোটেল বুকিং করার আগে হোটেলের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন এবং সময়টা জেনে নিন কয়টা থেকে কয়টা পর্যন্ত বুকিং সময়। সিজন সময়ে পর্যটক বেশি থাকার করানে হোটেল বুকিং পেতে সমস্যা হতেপারে, তাই আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। সাধারণত তিনদিন সয়ম লাগবে দার্জিলিং সম্পূর্ণ ঘুরে আসতে। তবে দার্জিলিংয়ের মোহময়ী সৌন্দর্য ভালোভাসে উপভোগ করতে হলে কমপক্ষে সময় লাগবে এক সপ্তাহ। 

খাওয়ার ব্যবস্থা

এখানকার স্থানীয়রা ভাতের সাথে গরুর মাংস এবং ডাল খেতে খুব পছন্দ করে। স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি থাই, ইন্ডিয়ান ও বাঙ্গালি খাবারও পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবারের মধ্যে গানড্রাক (গাঁজানো সরিষা পাতা), থুপকা(মাংস, নুডলস, ডিম ও সবজি দিয়ে তৈরি ঘন স্যুপ), মম(মাংস বা সবজি দিয়ে পিঠার মত খাবার), চ্যাং (স্থানীয় বিয়ার) খুবই জনপ্রিয়। এখানে কিছু মুসলিম হোটেলও রয়েছে। 

দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থান সমূহ

দার্জিলিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু স্থাপনাগত সৌন্দর্য। যেমন এখানে রয়েছে সবচেয়ে উচুতে রেলওয়ে স্টেশন। হাজার হাজার ফুট উচুতে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে চলছে বাষ্প চালিত ইঞ্জিনের ট্রেন। এই টয় ট্রেনে করে পাহাড়ী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৃতির রূপে মগ্ধ হয় পর্যটকরা। দেখতে দেখতে অনুভব করবেন অন্য রকম এক অনুভুতি। তাই এখানে যারাই আসেন, এই টয় ট্রেনের স্বাদ নিতে ভুলেন না। 

 

দার্জিলিংয়ের টাইগার হিল 

টাইগারহিলের উচ্চতা ৮,৪৯৭ ফুট। এটি দার্জিলিং থেকে ১১ কি.মি. দূরে অবস্থিত।  দার্জিলিং-এর টাইগার হিল পর্যটকদের নিকট এক বিশেষ আকর্ষণীয় স্থান। কারণ সকালে সূর্যদয় দেখার জন্য এটি সবচেয়ে ভালো জায়গা। সকালে সূর্য উদিত হলে সূর্যের লাল আলো কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর পড়ে এবং পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা এক অন্যরকম সোনালী আলোয় আলোকিত হয়। আপনি ভাগ্যবান হলে সেই দৃশ্যও দেখতে পাবেন। ভাগ্যবান বলছি এই জন্য যে, অনেক সময় মেঘের কারণে টাইগার হিল থেকে এই দৃশ্য দেখা যায় না। তাই আকাশ পরিষ্কার থাকলে টাইগার হিল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। 

দার্জিলিং চিড়িয়াখানা

এখানে রয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। পাহাড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় হিমালয়ান অঞ্চলের স্নো লিওপার্ড, কালো ভাল্লুক, হিমালয়ান নেকড়ে, ক্লাউডেড লিওপার্ড, ও রেড পাণ্ডার মতো বিরল কিছু প্রাণী। রয়েছে কিছু পাখি ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এখানে পাবেন ওয়াইল্ড লাইফ মিউজিয়াম যা পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ। আরও রয়েছে ১৮৫৪ সালে স্থাপিত দার্জিলিং শহরের দ্বিতীয় প্রাচীন চা বাগান। ইচ্ছে করলে এখানে চায়ের সাদ নিতে পারবেন বা চা পাতা কিনে আনতে পারবেন। রয়েছে বেঙ্গল ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরে আসার মত একটি জায়গা। বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখির দেখা মিলবে এই মিউজিয়ামে। আরও দেখতে পাবেন প্যাগোডা ও মনেস্ট্রি। প্রাচীন এই মন্দিরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০,০০০ ফুট উচুতে অবস্থিত এবং এই মন্দিরে রয়েছে ১৫ ফুট উচু বৌদ্ধ মূর্তি। দার্জিলিংয়ের একটি বিশেষ আকর্ষণ হলো ক্যাবল কার। যা ১৬ কি.মি. দৈর্ঘ্য এবং ৫৫০০ ফুট উচু দিয়ে আপনাকে চা বাগানের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। 

সর্তকতা

* দার্জিলিং পরিচ্ছন্ন শহর, তাই নোংরা করবেন না।
* উন্মুক্ত ধূমপান করা দার্জিলিংয়ে দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
* রাতে বাহিরে ঘুরাঘুরি থেকে বিরত থাকুন।
* লোকাল দোকান থেকে কেনাকাটা না করে, শপিংমল থেকে কেনাকাটা করুন তাহলে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকবে।
* হোটেল রুম বুকিং করার আগে গরম পানি এবং রুম হিটারের ব্যবস্থা আছেকিনা জেনে নিন। কারণ দার্জিলিংয়ে অনেক ঠাণ্ডা পরে।
* পাহাড়ে উঠার সময় হিল স্যান্ডেল পরিহার করুন।
 
 
রেফারেন্স: vromonguide
পাহাড়ের রানী দার্জিলিং এর দর্শনীয় স্থান, যাওয়ার উপায় এবং ভ্রমণ গাইড
Scroll to top