জানাজার নামাজ হলো মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া বা এস্তেগফার করা। এই জন্য জানাজার নামাজের শেষে দোয়া করতে নেই, যেহেতু জানাজার নামাজটিই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া। জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া অর্থাৎ এলাকাবাশির পক্ষ হতে কিছু লোক জানাজা আদায় করে দিলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু কোন ব্যক্তিই জানাজা পড়লোনা এবং জানাজা ছাড়াই মৃত ব্যক্তিকে দাফন করে দিলো, তাহলে এলাকার সকল ব্যক্তি গুনাগার হবে। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বেশি হবে ততই উত্তম। জানাজার নামাজের কাতার সংখ্যা বেজোড় হওয়া উত্তম।
জানাজার নামাজের ফরজ কয়টি?
জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি । এই দুই ফরজ আদায় না করলে জানাজার নামাজ হবে না। তাই ইমাম ও মুক্তাদী সকলকেই এই দুই ফরজ আদায় করতে হবে।
১) চার তাকবির দেয়া (তাকবির- আল্লাহু আকবার)
২) দাঁড়াইয়া জানাজার নামাজ আদায় করা
জানাজার নামাজের সুন্নত কয়টি?
জানাজার নামাজের সুন্নত তিনটি। জানাজার নামাজে এই তিনটি সুন্নত আদায় করতে হবে, নাহয় নামাজ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
১) ছানা পড়া
২) দুরূদ শরীফ পড়া
৩) জানাজার দোয়া পড়া
জানাজার নামাজের নিয়ম
ঈদের নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তুলতে হয়, কিন্তু জানাজার নামাজে প্রথম তাকবির ছাড়া অন্য তাকবিরগুলোতে হাত তুলতে হয় না। দ্বিতীয় তাকবির দেয়ার সময় হাত বাধা অবস্থায় ইমাম সাহেব জোরে তাকবির বলবেন এবং মুক্তাদীরা আস্তে তাকবির বলবেন। তাকবির বলা ফরজ, তাই ইমাম ও মুক্তাদী সকলকেই তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে হবে, নাহয় ফরজ বাদ দেয়ার কারনে নামাজ হবে না। ইমাম সাহেব মৃত ব্যক্তির ছিনা বরাবর দাড়াবেন এবং মুক্তাদীরা ইমামের পেছনে দাড়াবেন। অন্যান্য নামাজে ওজু যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি জানাজার নামাজেও ওজু থাকা বাধ্যতামূলক। শরীর ও কাপড় পাক-পবিত্র থাকা বাধ্যতামূলক।
জানাজার নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে এরাদা করা, তাই নিয়ত মুখে বলা বা আরবিতে উচ্চারণ করা ফরজ নয়। মুখে উচ্চারণ করে বা মনে মনে বললেই হবে “আমি কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে চার তাকবিরের সাথে ফরজে কেফায়ার নামাজ আদায় করতেছি।” তারপর ইমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত করলে আপনাকেও আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাধতে হবে।
জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়ম
ইমাম সাহেব এই নিয়ত করবে “আমি কেবলামুখী হয়ে আমার পেছনের মুছল্লিদেরকে নিয়ে চার তাকবিরের সাথে এই মাইয়াতের ফরজে কেফায়ার নামাজ আদায় করতেছি।” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধবে। ইমাম ও মুক্তাদীদের জানাজার নামাজের নিয়ম একই রকম। পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে, ইমাম সামনে দাড়াবে এবং মুক্তাদীরা পেছনে দাড়াবে এবং ইমাম জুরে তাকবির বলবে, মুক্তাদীরা আস্তে তাকবির বলবে।
১) প্রথমে দাড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে নিয়ত করতে হবে। নিয়ত“এই ইমামের পেছনে চার তাকবিরের সাথে ফরজে কেফায়ার নামাজ আদায় করতেছি।”
২) তারপর আল্লাহু আকবার বলে নাভির উপর হাত বাধতে হবে।
৩) হাত বাধার পর ছানা পড়তে হবে। জানাজার নামাজের ছানা নামাজের ছানা থেকে একটু পার্থ্য রয়েছে, “ওয়া জাল্লা ছানা উকা” এতটুকু বেশি বলতে হয়।
আরবিতে জানাজার নামাজের ছানা
ছানা বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা, ওয়াতা আলা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানা-উকা ওয়া লা-ইলাহা গায়রুক।
৪) ইমাম যখন দ্বিতীয় তাকবির দিবে তখন মুক্তাদী অনুচ্চ স্বরে হাত বাধা অবস্থায় “আল্লাহু আকবার” বলে তাকবির দিবে এবং প্রতিদিন নামাজে যে দুরূদ পড়ি সেই দুরূদ পড়বে।
দুরূদ আরবিতে
দুরূদের বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।
৫) ইমাম যখন তৃতীয় তাকবির দিবে তখন মুক্তাদী অনুচ্চ স্বরে হাত বাধা অবস্থায় “আল্লাহু আকবার” বলে তাকবির দিবে এবং দোয়া পড়বে।
জানাজার নামাজের দোয়া আরবিতে বা জানাজার নামাজের তৃতীয় দোয়া
জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ সহ
আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া ছগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংছানা, আল্লাহুম্মা মান আহ ইয়াইতাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মাংতা ওয়াফফাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান।
জানাজার নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ সহ
হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ইমানের সাঙ্গেই মৃত্যু দিন।
মৃত ব্যক্তি ছেলে শিশু হলে অর্থাৎ নাবালেগ হলে এই দোয়া পড়তে হবে
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।
মৃত ব্যক্তি মেয়ে শিশু হলে অর্থাৎ নাবালেগা হলে এই দোয়া পড়তে হবে
বাংলা উচ্চরণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।
৬) ইমাম সাহেব চতুর্থ তাকবির দিয়ে হাত বাধা অবস্থায় প্রথমে ডানে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে সালাম ফিরাবে এবং হাত বাধা অবস্থাতেই “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে বামে সালাম ফিরাবে। মুক্তাদীরাও ইমামের সাথে তাকবির বলে হাত বাধা অবস্থাতেই প্রথমে ডানে এবং পরে বামে সালাম ফিরিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে নামাজ শেষ করবে।
এক নজরে জানাজার নামাজের নিয়ম
১) নিয়ত করা
২) তাকবির বলে হাত বাধা এবং ছানা পড়া
৩) দ্বিতীয় তাকবির বলে দুরূদ শরীফ পাঠ করা
৪) তৃতীয় তাকবির বলে দোয়া পড়া
৫) চতুর্থ তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।
জানাজার নামাজের ফজিলত
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে, সে এক কিরাত পরিমাণ সাওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করে এবং তার দাফনের কাজে অংশগ্রহণ করে, সে দুই কিরাত পরিমাণ সাওয়াব লাভ করে। এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ কিরাত কি? তখন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন কিরাত হলো ওহুদ পাহাড়ের সমান। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোন মুসলমানের জানাজায় আল্লাহর সাথে শরীক করেনি এমন চল্লিশজন লোক অংশগ্রহন করে জানাজার নামাজ আদায় করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সুপারিশ নিশ্চয়ই কবুল করবেন। (সহীহ মুসলিম)
এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের ৬টি হক রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো কোন মুসলমান মারাগেলে তার জানাজায় শরিক হওয়া।
আরও পড়ুন: সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম