নীলগিরি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতমালাগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি একটি বিস্ময়কর পর্যটন স্থান। থানচি থানায় অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি প্রায় ৩৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নীলগিরিকে বাংলাদেশের দার্জিলিং বলা হয়। নীলগিরির রূপ-মাধুর্যে ভারতের দার্জিলিংয়ের থেকে কোন অংশে কম নয়। প্রকৃতি যেন তার সবটুকু সৌন্দর্যের মহিমা নিয়ে বসে রয়েছে পর্যটকদের আনন্দ দেয়ার জন্য।
নীলগিরি বাংলার দার্জিলিং
পাহাড়ের নিচ থেকে চূড়া অবধি সবুজের চাদরে আবৃত। নীলগিরির কাছে মোরো উপজাতির একটি গ্রাম অবস্থিত। এখানে আসা এবং তাদের রঙিন সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সাক্ষী হওয়া আপনার জন্য একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে।
বর্ষায় যখন পুরো এলাকা মেঘে ঢেকে যায়, তখন এখানে এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। সকালের দৃশ্যটা এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত। সুন্দর চাঁদনী রাত উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে চান্দ্র মাসের ৯ থেকে ১৭ তারিখে এখানে আসতে হবে। এখানে আপনি সাঙ্গু নদীর বয়ে চলা অবলোকন করতে পারবেন। নীলগিরি বান্দরবানের আর্মিদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে
নীলগিরির পাশাপাশি বান্দরবানে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন: নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা, শৈল প্রপাত ঝরনা, মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড়, সাঙ্গু নদী, তাজিনডং, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝরণা, বগালেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিক লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, নাফাখুম জলপ্রপাত। এছাড়া বান্দরবানে কয়েকটি ঝিরি রয়েছে। যেমনঃ চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানাপাড়া ঝিরি ইত্যাদি। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলে সহজেই স্থানগুলোর দূরত্ব ও লোকেশন সহজেই জেনে নিতে পারবেন।
যদি আপনি নীলগিরি আসেন তাহলে প্রথমেই আপনার চোখ পড়বে পাথুরে শৈল প্রপাত ঝরনার উপর, তার একটু পরেই পড়বে চিম্বুক পাহাড়। নীলগিরিতে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, ঝরনা, বন-বনানীর সৌন্দর্য একই সাথে উপভোগ করতে পারবেন। দার্জিলিংখ্যাত চিম্বুক পাহাড়ে উঠে দক্ষিণে তাকালেই দেখতে পাবেন পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। নীলগিরিতে এই রোদ, এই মেধ, এই বৃষ্টি।
নীলগিরিতে পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে নতুন রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এখানে বসে চোখ বুলালে দূর-বহুদূরে দেখা যাবে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাহাড় কেওক্রাডং, বগা লেক, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর।
এখানে রেস্তোরাঁ ছাড়াও, পার্কিং এলাকা থেকে নীলগিরি চূড়া পর্যন্ত নান্দনিকভাবে মনোরম ওয়াক ওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন রঙ ও শৈলীতে পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু চওড়া চত্বর। আরও রয়েছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের বসার বেঞ্চ ও শেড। এসবের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায় প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলে। নীলগিরিতে রয়েছে আর্মিদের ক্যাম্প, তাই পরিবার নিয়ে নির্ভয়ে ঘুরে আসতে পারেন। পর্যটকদের জন্য আর্মিরা মেঘের রাজ্য নীলগিরিকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তুলেছেন।
যেভাবে যেতে হবে নীলগিরি
ঢাকা থেকে বান্দরবান পর্যন্ত বেশ কিছু ভালোমানের এসি-নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ঈগল, সেন্ট মার্টিন ট্রান্সপোর্ট, ডলফিন ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি। আপনি এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। রাতের বাসে রওনা দিলে সকাল ৭টার মধ্যেই বান্দরবান চলে আসতে পারবেন। এছাড়া ট্রেন বা প্লেনে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে, চট্টগ্রাম থেকে বাস বা প্রাইভেটকার নিয়ে বান্দরবান আসতে পারেন। তার জন্য আপনাকে চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যেকোন একটি বাস বেছে নিতে হবে। বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। বান্দরবানে পৌঁছানোর পর নীলগিরিতে যাওয়ার জন্য আপনাকে চাঁদের গাড়িতে করে যেতে হবে। চাঁদের গাড়িতে করে নীলগিরি পৌছাতে সময় নিবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। চাঁদের গাড়িতে যেতে হলে আপনাকে বিকেলের আগেই বান্দরবান পৌছাতে হবে। বিকেলের পরে কোন গাড়ি নীলগিরির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় না। নীলগিরি যাওয়ার পথে আর্মি চেকপোস্টে আপনার নাম ঠিকানা লিখতে হবে।
থাকার ব্যবস্থা
নীলগিরিতে রাত্রিযাপনের জন্য কিছু আকর্ষণীয় কটেজ রয়েছে যেমন মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলঙ্গানা, হেতকরা রাইচা, মারমা রাইচা ইত্যাদি। এগুলো সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয় । আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই কটেজে আবাসন ও রাত্রি যাপনের জন্য আগাম সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড সদর দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। ভাড়া ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ভাড়া একটু বেশি হলেও মজাটা অন্য অন্যরকম। তবে বান্দরবান শহরে থাকার জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সহ খুবই ভালো মানের হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী রুমের ভাড়ার তারতম্য হয়। ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন: হোটেল হিল ভিউ, বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। হোটেল হিলটন, বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। হোটেল প্লাজা, বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটার দূরত্বে। হোটেল রিভার ভিউ, শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। পর্যটন মোটেল, পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত
খাবারের ব্যবস্থা
নীলগিরিতে রেস্টুরেন্ট রয়েছে, ওখানে খেতে পারেন। তবে এর জন্যে আপনাকে আগে থেকে বুকিং দেয়া লাগবে। অথবা বান্দরবান শহরে ফিরে এসে খেতে পারেন। বান্দরাব শহরে অনেক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেখানে কম খরচে আপনি খেতে পারবেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
➤ বান্দরবন থেকে নীলগিরি পর্যন্ত আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ভ্রমণ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।➤ চাঁদের গাড়ির ছাঁদে উঠবেন না।
➤ ভ্রমণের সময় অবশ্যই সাথে করে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যাবেন। বিভিন্ন চেকপোষ্টে দেখাতে হতে পারে।
➤ শৈল প্রপাত ঝর্ণার পাথুরে পথ অনেক পিচ্ছিল, নামার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
➤ নীলগিরিতে অনেক আদিবাসী বাস করে, আদিবাসীদের অসম্মান হয় এমন কিছু করলে বিপদ হতে পারে।
➤ গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। পর্যটক স্থানগুলোর দূরত্ব ও সিরিয়ালি অবস্থান দেখতে পারবেন।