নীলাচল বান্দরবানের এক স্বর্গীয় স্থান। কেউ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সবুজ সমারোহ দেখতে চাইলে এবং মেঘের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে চাইলে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবান যেতে হবে। বান্দরবানে দেখার মত অনেক স্থান রয়েছে। যেদিকেই তাকাবেন চোখ জুড়িয়ে যাবে। এক একটি স্থানের সৌন্দর্য এক এক রকম। কোনটি থেকে কোনটির সৌন্দর্য কম নয়। বাংলাদেশে এত সুন্দর ও মনমুগ্ধকর দার্শনীয় স্থান রয়েছে প্রথমে আপনার বিশ্বাস হতে চাইবে না। এ যেন এক উঁচু-নিঁচু সবুজ পাহাড়ে ঘেরা মন কাড়ানো দৃশ্য। যে কারো মন কেড়ে নিবে প্রকৃতির এই মিতালী।
দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে : নীলাচল, স্বর্ণমন্দির, নীলগিরি, মেঘলা, শৈল প্রপাত, মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড়, সাঙ্গু নদী, তাজিনডং, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝরণা, বগালেক, মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, প্রান্তিক লেক, ঋজুক জলপ্রপাত, নাফাখুম জলপ্রপাত। এছাড়া বান্দরবানে কয়েকটি ঝিরি রয়েছে। যেমনঃ চিংড়ি ঝিরি, পাতাং ঝিরি, রুমানাপাড়া ঝিরি ইত্যাদি। আপনার হাতে যাদি সময় বেশি থাকে তাহলে সবগুলো যায়গা ঘুরে আসতে পারেন। আর যদি সময় কম থাকে তাহলে বান্দরান শহরে থেকে আশপাশের কিছু স্থান রয়েছে, যেগুলো সহজেই যাওয়া যাবে এবং সময় কম লাগবে। যেমন: নীলাচল, মেঘলা, নীলগিরি, স্বর্ণ মন্দির, শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ও চিম্বুক পাহাড় ইত্যাদি। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলে সহজেই স্থানগুলোর দূরত্ব ও লোকেশন সহজেই জেনে নিতে পারবেন।
নীলাচল
নীলাচলে রয়েছে আকাশ, পাহাড় ও মেঘের অপূর্ব সমন্বয় এবং অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সকালে মেঘের খেলা ও বিকেলে সূর্যাস্তের সময় নীলাচল তার পূর্ণ রূপ ধারণ করে। নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহর দেখা যায়। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা ও উচু নিচু রাস্তা পর্যটকদের একইভাবে মুগ্ধ করে। নীলাচল বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তকালে মেঘেরা হাতের নাগালে খেলা করে। নীলাচলের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নানা রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে অনেক বিশ্রামাগার ও রিসোর্ট রয়েছে। পর্যটকরা সাধারণত সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নীলাচল এ থাকতে পারেন। পরে যারা রিসোর্টে রাত্রি যাপন করে তাদেরই থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। মেঘ দেখতে চাইলে খুব ভোরে যেতে হবে নীলাচলে।
যেভাবে যাবেন নীলাচল
ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবান যাওয়া যায়। শ্যামলী, সৌদিয়া, এস.আলম, হানিফ সহ বিভিন্ন পরিবহন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। রাত ৯-১০ টায় ছাড়লে সকাল ৮টার মধ্যে বান্দরবান পৌঁছে যাবেন। আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে বান্দরবানে ট্রেন বা বিমানে যেতে পারেন। চট্টগ্রামের বাড্ডারহাট থেকেও বিভিন্ন গাড়ি ছেড়ে যায় বান্দরবানের উদ্দেশ্যে।বান্দরবান থেকে নীলাচল যেতে সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও জীপ পাওয়া যায়। আপনি যে পরিবহণের জন্য যান তার জন্য আপনি একটু দর কষাকষি করে নিবেন।
থাকার ব্যবস্থা
প্রথম কাজ হবে হোটেল নিয়ে নেওয়া। আগে থেকে হোটেল ঠিক করে রাখতে পারলে ভালো, না হয় বান্দরবান এসেও হোটেল নেয়া যাবে। নীলাচল এ থাকতে চাইলে নীলাচল স্ক্যাপ রিসোর্টের তিনটি কটেজের মধ্যে একটি বেছে নিতে পারেন। প্রতিটি কটেজে দুটি কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও, নীলাচল বান্দরবান শহরের কাছাকাছি, তাই আপনি বান্দরবান শহরের হোটেল এবং রিসোর্টে থাকতে পারেন। বান্দরবানে থাকার হোটেল ও রিসোর্টগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটির নাম দেয়া হল। হোটেল হিল ভিউ, বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। হোটেল হিলটন, বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর কাছেই। হোটেল প্লাজা, বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটার দূরত্বে। হোটেল রিভার ভিউ, শহরের সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান। পর্যটন মোটেল, পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত।
এগুলোর ভাড়া নির্ভর করবে আপনি কখন যাচ্ছেন তার উপর। পর্যটন মৌসুম (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) এবং সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে ভাড়া বেশি হতে পারে। আপনি যদি সিজনে এবং ছুটির দিনে যান তবে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই হোটেল রুম বুক করতে পারেন। এ ছাড়া অনেক রিসোর্ট, হোটেল, মোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে যেখানে আপনি ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় অনায়াসে রাত কাটাতে পারবেন। সিজন ছাড়া গেলে কম ভাড়ায় থাকতে পারবেন। তবে বর্ষকালে না যাওয়াই ভালো। কারণ তখন পাহাড়ী ঢল নেমে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে আপনি অনেক ভোগান্তির সম্মুখীন হতে পারেন।
খাবারের ব্যবস্থা
অনেক হোটেলে থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আবার অনেক হোটেলে খাবারের ব্যবস্থা নেই, শুধু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তাই হোটেল বুকিং করার সময় জেনে নিন খাবারের ব্যবস্থা আছেকিনা? না থাকলে কতটুকু দূরে যেয়ে খাবার খেতে হবে? খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই দাম জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করবেন না। নাহয় খাওয়ার পর আপনার থেকে বেশি টাকা আদায় করার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: এক সুন্দরী রমণী ও হযরত মালেক ইবনে দীনার (রহ:) এর কাহিনী