নতুন পোষ্টের বিজ্ঞপ্তি পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন!

তারাবির নামাজের নিয়ম | তারাবির নামাজের দোয়া ও তারাবির নামাজের মোনাজাত

 

তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজ রমজানের সিয়ামের বিশেষ একটি আমল। মুমিন বান্দারা যথাযথভাবে এবং গুরুত্ব সহকারে তারাবির নামাজ আদায় করে থাকে। রমজান মাসে মুসলমানরা দিনে রোজা রাখে এবং রাতে তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। এই মাসটি হলো এবাদতের মাস। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতগুলোর মধ্যে তারাবির নামাজ অন্যতম। এই নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও তারাবির নামাজ আদায় করতে বলেছেন।  এই মাসে কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, এই দোয়াগুলো যে যত বেশি পড়বে সে তত বেশি লাভবান হবে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তারাবির নামাজের নিয়ম, তারাবির নামাজের দোয়া, তারাবির নামাজের মোনাজাত, তারাবির নামাজের নিয়ত, তারাবির নামাজ কত রাকাত, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল, তারাবির নামাজ কিভাবে পড়বেন এবং তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সবকিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

তারাবির নামাজের ফাজায়েল বা লাভ

➥হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশায় রমজানে তারাবির নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তার অতীতের গুনাহুগুলো ক্ষমা করে দেবেন। (সহীহ বুখারি)

➥হযরত উবাদা ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রমজান মাসের নিকটবর্তী সময়ে একদিন হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, রমজান মাস এসে গেছে। এটি অতি বরকতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন, বিশেষ রহমত নাযিল করেন, গোনাহ মাফ করেন এবং দোয়া কবুল করেন। তোমাদের তানাফুসকে (অর্থাৎ পরস্পর প্রতিযোগিতাকে) দেখেন এবং ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। অতএব তোমরা আল্লাহকে তোমাদের নেক কাজ দেখাও। ঐ ব্যক্তি বড়ই হতভাগা যে এইমাসেও আল্লাহর রহমত হতে মাহরূম ও বঞ্চিত থেকে যাবে। (তারগীব: তাবারানী)

হযরত আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) রমজান মাসের আলোচনা প্রসঙ্গে এরশাদ করলেন, এটি এমন মাস যা রোজা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য এর তারাবীহকে সুন্নাত সাব্যস্ত করেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওয়াদার উপর বিশ্বাস করে এবং তার আজর ও পুরস্কারের আগ্রহ নিয়ে এই মাসের রোজা রাখে ও তারাবীহ পড়ে সে গুনাহ হতে এরূপ পাক হয়ে যায় যেন সে আজই আপন মাতৃগর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করেছে। (ইবনে মাজাহ)

যে ব্যক্তি ইমান ও সাওয়াবের আশায় রোজা রাখে, তারাবির নামাজ পড়ে এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহ’তাআলার  এবাদত করে, আল্লাহ তার জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করেদেন। (মিশকাত, হাদিস নং- ১৮৬২)

হযরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের শেষ তারিখে আমাদেরকে নসীহত করেছেন যে, তোমাদের উপর এমন একটি মাস আসতেছে, যা অত্যন্ত মর্যাদাশীল ও বরকতময়। এই মাসে এমন একটি রাত্র (শবে কদর) রয়েছে, যা হাজারো মাস হতে উত্তম। আল্লাহ তায়ালা এই মাসে রোজা রাখাকে ফরজ করেছেন এবং এই মাসের রাত্রগুলোকে নামাজ (অর্থাৎ তারাবীহ) পড়াকে সওয়াবের কাজ বানিয়েছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এই মাসে কোন নফল এবাদত করল, সে যেন রমজানের বাহিরে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এই মাসে কোন ফরজ আদায় করল সে যেন রমজানের বাহিরে সত্তরটি ফরজ আদায় করল। এটি ছবরের মাস আর ছবরের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত রেখেছেন। এটি মানুষের সাথে সহানুভূতির মাস। এই মাসে মুমিনের রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, এটি তার জন্য গোনাহমাফী ও জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমান সওয়াবের ভাগী হবে। কিন্তু রোজাদার ব্যক্তির সওয়াবের মধ্যে কোন কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই তো এমন সামর্থ্য রাখে না যে, রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (পেট ভর্তি করে খাওয়াতে হবে না) এই সওয়াব তো আল্লাহ তায়ালা একটি খেজুর খাওয়ালে অথবা এক ঢোক পানি পান করালে অথবা এক চুমুক দুধ পান করালেও দান করবেন। তা এমন মাস যে, এর প্রথম অংশে আল্লাহর রহমত নাজিল হয়, মধ্যের অংশে গোনাহ মাফ করা হয় এবং শেষ অংশে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি এই মাসে আপন গোলাম (ও কর্মচারী বা খাদেম) এর কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেন এবং জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি দান করেন। এই মাসে চারটি কাজ বেশী বেশী করতে থাক। তন্মধ্যে দুইটি কাজ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য আর দুইটি কাজ এইরূপ যা না করে তোমাদের উপায় নাই। প্রথম দুই কাজ যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করবে তা এই যে, অধিক পরিমাণে কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়বে এবং এস্তেগফার করবে। আর দুইটি কাজ হল, আল্লাহ তায়ালার নিকট জান্নাত পাওয়ার জন্য দোয়া করবে এবং জাহান্নাম হতে মুক্তির জন্য দোয়া করবে। যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তায়ালা (কেয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসার হতে এইরূপ পানি পান করাবেন যার পর জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর পিপাসা লাগবে না। (তারগীব: ইবনে খুযাইমাহ, বাইহাকী, ইবনে হিব্বান)

তারাবির নামাজ কখন পড়তে হয়

তারাবি আরবি শব্দ, যা তারবিহাতুন শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হলো আরাম বা প্রশান্তি অর্জন। যেহেতু প্রতি চার রাকাত অন্তর অন্তর বিশ্রাম নিয়ে আদায় করা হয়, তাই এই নামাজকে তারাবির নামাজ বলে। তারাবির নামাজ এশার ফরজ নামাজের পর পড়তে হয় এবং তারাবির নামাজ শেষ করে বিতর নামাজ পড়তে হয়। রমজান মাসে বিতর নামাজ ইমামের পেছনে জামাতের সাথে পড়া হয়ে থাকে।

তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতে

তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতে


তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

অর্থ : আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করছি; আল্লাহু আকবার।

নামাজের ভেতরে ও বাহিরে ১৩টি ফরজ রয়েছে, তার মধ্যে নিয়ত করা একটি ফরজ। আমাদের সমাজে একটি ভুল বিশ্বাস রয়েছে যে, নিয়ত আরবিতে করতে হবে, কিন্তু এটা ঠিক নয়। নিয়ত অর্থ এরাদা করা বা সংকল্প করা। মনে মনে নিয়ত করলেও ফরজ আদায় হয়ে যাবে। যদি মুখে উচ্চারণ করে পড়তে হয় তাহলে এভাবে নিয়ত করবেন, “আমি কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে তারাবির দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করতেছি” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধতে হবে।

তারাবির নামাজের নিয়ম

এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ার পর এবং বিতর নামাজের আগে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত। দুই দুই রাকাত করে বিশ রাকাত তারাবি আদায় করতে হয়।

১। প্রথমে নিয়ত করা যে,“আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাজ আদায় করতেছি” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধতে হবে। যদি জামাতের সাথে পড়া হয় তাহলে বলতে হবে “আমি কেবলামুখী হয়ে এই ইমামের পেছনে দুই রাকাত তারাবির সুন্নাতে মুয়াক্কাদার নামাজ আদায় করতেছি” আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধতে হবে।

২।  এবার ছানা পড়তে হবে, (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক। 

অর্থ: 'হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।

৩। তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রাজিম ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।

৪। সূরা ফাতিহা শেষ করার পর যেকোন একটি সূরা পাঠ করতে হবে বা কোরআন শরিফের যেকোন স্থান হতে কমপক্ষে ৩ আয়াত পড়তে হবে।

৫। তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে যাওয়ার পর রুকুর তাসবি পড়বে, “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” তিন বার, পাঁচবা, সাতবার যতবার ইচ্ছে। তবে বেজোড় সংখ্যা পড়লে উত্তম।

৬। রুকু হতে উঠার সময় পড়বে “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” এবং সুজা হয়ে দাড়িয়ে পড়বে “রব্বানা লাকাল হামদ”।

৭। দাড়ানো থেকে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদার তাসবি পড়বে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” তিন, পাঁচ অথবা সাতবার।

৮। এক সিজদা দেয়ার পর সোজা হয়ে বসে আবার দ্বিতীয় সিজদায় যেতে হবে। আবার তিন, পাঁচ অথবা সাতবার “সুবহানা রাব্বিয়াল আ-লা” পড়তে হবে।

৯। এবার আল্লাহু আকবার বলে দাড়িয়ে যেতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।

১০। এবার দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর তার সাথে আরেকটি সূরা পড়তে হবে (প্রথম রাকাতের নেয় ছানা পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রথম রাকাতেই শুধু ছানা পরতে হয়, অন্য রাকাতগুলোতে ছানা পরতে হয় না)। এখন আগের নিয়মে রুকু ও সিজদার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। দুই সিজদা করার পর বসতে হবে এবং তাশাহুদ পড়তে হবে। তাশাহুদ শেষ করে দুরূদশরীফ ও দোয়া মাছুরা পড়ার পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।

তাশাহুদ আরবিতে

তাশাহুদ আরবিতে


তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ 

আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাত। আসসালামুয়ালাইকা আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আসসালামুয়ালাইনা আ'লা ইবাদিল্লাহিস সয়ালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ্”।

তাশাহুদের বাংলা অর্থ

সমস্ত মৌখিক ইবাদত, সমস্ত শারীরিক ইবাদত এবং সমস্ত পবিত্র বিষয় আল্লাহ তা’আলার জন্য। হে নবী! আপনার উপর শান্তি ও তার বরকতসমূহ নাজিল হওক। আমাদের প্রতি ও আল্লাহ তা’আলার নেক বান্দাদের প্রতি তার শান্তি বর্ষিত হওক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।

দুরূদ শরীফ আরবিতে

দুরূদ শরীফ আরবিতে


দুরূদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রাহীম, ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।

দুরূদ শরীফের বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! তুমি রহমত বর্ষণ কর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ও তাঁর পরিবারের পরিজনের প্রতি, যেমন রহমত বর্ষণ করেছিলে ইব্রাহীম (আ.) এর প্রতি ও তাঁর পরিবার পরিজনে প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! তুমি বরকত নাজিল কর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ও তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি, যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইব্রাহীম (আ.) এর প্রতি ও তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রসংসিত ও সম্মানিত।

দোয়া মাছুরা আরবিতে

দোয় মাছুরা আরবিতে


দোয়া মাছুরা বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্ জুনুবা, ইল্লা আংতা, ফাগফিরলী মাগফিরাতাম, মিন ইংদিকা ওয়ার হামনী, ইন্নাকা আংতাল গাফুরুর রাহীম।

দোয়া মাছুরা বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মার উপর অসংখ্য জুলুম করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার আর কেহ নাই। অতএব আমাকে ক্ষমা কর তোমার নিজের পক্ষ হতে এবং আমাকে দয়া কর। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।

তাশাহুদ, দুরূদ শরীফ ও দোয়া মাছুরা শেষ করে প্রথমে ডান দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” পরে বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে নামাজ শেষ করতে হবে। এভাবে দুই রাকাত তারাবির নামাজ সমাপ্ত হবে। উক্ত নিয়মে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে।

মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম

তারাবির নামাজ মহিলাদের জন্য এবং পুরুষদের জন্য একই নিয়ম। মহিলাদের জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই। উপরুক্ত নিয়মে মহিলারও তারাবির নামাজ আদায় করবেন।

দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত পড়ার পর একটি প্রচলিত দোয়া রয়েছে। তবে দোয়াটি পড়া জরুরী নয়। পড়লে সাওয়াব পাওয়া যাবে, না পড়লে কোন গুনাহ হবে না।

তারাবির নামাজের দোয়া

তারাবির নামাজের দোয়া আরবিতে


তারাবির নামাজের দোয়া উচ্চরণ

সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইজ্জাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিইয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুতু আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়ার রূহ।

তারাবির নামাজের দোয়ার অর্থ

আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী। তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিব্রিল (আ:) এর প্রতিপালক।

তারাবির নামাজের মুনাজাত

তারাবির নামাজের মোনাজাত আরবি

তারাবির নামাজের মোনাজাত আরবি


তারাবির নামাজের মুনাজাতের উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতা ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফারু, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বাররু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ সহ

হে আল্লাহ! আমরা তোমার কাছে জান্নাতের জন্য ফরিয়াদ করছি এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। হে জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টিকর্তা। হে ক্ষমতাময়! হে ক্ষমাশীল! হে দয়ালু অসীম! হে দোষ গোপনকারী! হে দয়াবান! হে শক্তিমান! হে সৃষ্টিকর্তা! হে অনুগ্রহকারী আল্লাহ! হে প্রভু! আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো। হে রক্ষাকারী, হে রক্ষাকারী, হে রক্ষাকারী! তোমার রহমতের আশ্রয় চাই, হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।

তারাবির নামাজ কত রাকাত

তারাবির নামাজ মোট ২০ রাকাত। দুই দুই রাকাত করে বিশ রাকাত পড়তে হয়। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দিন এই নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেছেন। নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সাথে আদায় করলে তা ফরজ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই তিনি পুরো রমজানে তারাবির নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেননি। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা:) এর সময় থেকে সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা হয়। 

সৌদি আরবে তারাবির নামাজ কত রাকাত

ওমর (রা:) এর যুগ থেকে মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবি আদায় করা হয় এবং মক্কা-মদিনায় এখনো ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। যেখানে আট রাকাতের কথা রয়েছে, সেটি মূলত তাহাজ্জুদের হাদিস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ও রমজানের বাহিরে আট রাকাত তাহাজ্জুদ ও তিন রাকাত বিতর নামাজ আদায় করতেন।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। প্রত্যেক বালেগ পুরুষ ও বালেগা নারীদেরকে রমজানের রোজা রাখতে হবে এবং তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। কেহ ইচ্ছে করে এবং কোন উজর ছাড়া না পড়লে গুনাগার হবেন।

তারাবির নামাজের দোয়া কখন পড়তে হয়

তারাবির নামাজের দোয়া চার রাকাত পর পর পড়তে হয়। তবে এই দোয়া পড়া জরুরী নয়। পড়লে সওয়াব পাওয়া যাবে, না পড়লে গুহান হবে না এবং নামাজেরও কোন ক্ষতি হবে না।

তারাবির নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে

তারাবির নামাজের সময় ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত থাকে। কেহ ইচ্ছে করলে তাহাজ্জুদের সময় তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন। কিন্তু ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়েগেলে আর তারাবির নামাজ পড়তে পারবেন না।

তারাবির নামাজ কয় রাকাত করে পড়তে হয়

তারাবির নামাজ দুই দুই রাকাত করে পড়তে হয়।

তারাবির নামাজে কোন কোন সূরা লাগে

তারাবির নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। আপনি যে কোন সূরা দিয়ে পড়তে পারবেন। প্রথমে যদি সূরা ফিল পড়েন, দ্বিতীয় রাকাতে কুরাইশ পড়বেন। এভাবে উপর থেকে নিচের দিকে পড়বেন এবং এভাবে তারতিল ঠিক রেখে পড়া মুস্তাহাব। তবে এর ব্যতিক্রম হলেও নামাজ হয়ে যাবে।

মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম

মহিলাদের তারাবির নামাজ এবং পুরুষদের তারাবির নামাজের নিয়ম একই রকম। প্রথমে এশার চার রাকাত ফরজ পড়বেন, তারপর এশার দুই রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। তারপর তারাবির নামাজ পড়তে হয়। তারাবি শেষ করে বিতর নামাজ পড়তে হয়। এই নিয়ম পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য।

তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে

প্রত্যেক বালেগ পুরুষ ও বালেগা নারীর জন্য তারাবির নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, যা না পড়লে গুনাহ হবে।

আরও পড়ুন: কসর নামাজের নিয়ম এবং মেয়েদের কসর নামাজের বিধান

About the Author

আমাদের এই ওয়েব সাইটে জানা ও অজানা, ভ্রমণ, রেসিপি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরামর্শ, বিভিন্ন প্রাকারের হিসাব নিকাশ ও আবেদন, ভূমি জরিপ এবং দৈনন্দিনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য দিয়ে থাকি। এই সকল তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কালেক্ট করা হয়।
কুকি সম্মতি
এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে একটি ভালো ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দিতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে, আপনি কি কুকিজ ব্যবহারে সম্মত আছেন?
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.