নতুন পোষ্টের বিজ্ঞপ্তি পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন!

কক্সবাজারের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ভ্রমণ গাইড সহ বিস্তারিত তথ্য

কক্সবাজার ভ্রমণ
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ছবি

কক্সবাজার জেলাটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫২ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কি.মি.। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। কক্সবাজার দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের একটি সর্ববৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র এবং মাছ ধরার বন্দর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এই জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মায়ানমার, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর সমগ্র জেলাটিকে ঘিরে রেখেছে। এটি ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বের বৃহত্তম নিরবচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক বালুকাময় সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজারে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন রয়েছে। কক্সবাজার এক সময় পানোয়া নামে পরিচিত ছিল যার আক্ষরিক অর্থ হল হলুদ ফুল। আরেকটি প্রাচীন নাম ছিল পালঙ্কী।

কক্সবাজারের সকালের দৃশ্য
সকাল বেলা


নবম শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৬১৬ সালে, মুঘল সমম্রাজ্যের  আগপর্যন্ত কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের একটি বড় অংশ আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। মুঘল সম্রাট শাহ সুজা পাহাড়ি পথ ধরে আরাকানে যাওয়ার পথে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেখানে একটি ক্যাম্প স্থাপনের নির্দেশ দেন। তার কাফেলার প্রায় এক হাজার পালঙ্কী কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ডুলাহাজারা মানে হাজার পালঙ্কী। মুঘল, ত্রিপুরা এবং আরকানদের পর পর্তুগিজ ও ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সুন্দর্য


ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নাম থেকে কক্সবাজার নামটি এসেছে। কক্সবাজারের পুরাতন নাম ছিল পালংকি। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অধ্যাদেশ, ১৭৭৩ জারি হওয়ার পর, ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন। হিরাম কক্স তখন পালংকির মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন কক্স আরাকানি উদ্বাস্তু এবং স্থানীয় রাখাইনের মধ্যে হাজার বছরের পুরনো দ্বন্দ্ব সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন এবং উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছিলেন, কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই (১৭৯৯) মারা যান। তার পুনর্বাসনে অবদানের স্মরণে একটি বাজার স্থাপন করা হয় এবং এর নামকরণ করা হয় মিঃ কক্স সাহেবের বাজার। সেই কক্স সাহেবের বাজার থেকে আজকের কক্সবাজার।

সূর্যাস্ত কক্সবাজার


বেশ কিছু দ্বীপ এই জেলাকে ঘিরে রেখেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - মহেশখালী, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন প্রভৃতি। এই জেলার অর্ধেক এলাকা জুড়ে পার্বত্য অঞ্চল এবং অর্ধেক অংশে আছে সমুদ্র উপকূলীয় দ্বীপ। সামগ্রিকভাবে পাহাড়, সমুদ্র এবং বনে ঘেরা এই জেলাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য।

সামুদ্রিক শামুকের মালা


কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দর্শনীয় স্থান

বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে এখানে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হোটেল, মোটেল এবং সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি পঁচিশটি পাঁচ তারকা হোটেল। এছাড়াও, পর্যটকদের জন্য এখানে একটি ঝিনুকের মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। মায়ানমার, থাইল্যান্ড, চীন ইত্যাদি দেশগুলোর বিদেশী পণ্য নিয়ে বার্মিজ মার্কেট গড়ে উঠেছে। দেশের একমাত্র ফিস অ্যাকোয়ারিয়াম রয়েছে এখানে। এছাড়াও  ওয়াটার বাইকিং, বিচ বাইকিং, প্যারাসেলিং, কক্স কার্নিভাল সার্কাস শো, দরিয়া নগর ইকোপার্ক, কক্সবাজার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি দ্বারা নির্মিত অনেক স্থাপত্য, ফিউচার পার্ক, শিশু পার্ক এবং অনেক ফটোশুট স্পট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে টেকনাফ জিওলজিক্যাল পার্ক। আরও রয়েছে নাইট বিচ কনসার্ট। সৈকতের লাইটিং আপনাকে রাতে সমুদ্র উপভোগ করার সুযোগ করে দিবে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এখানে নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সী-অ্যাকোয়ারিয়াম। ক্যাবল কার এবং ডিজনি ল্যান্ড।

সামুদ্রিক নৌকা


কক্সবাজার কখন যাবেন?

কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য বেশিরভাগ মানুষ শীতকালকেই বেছে নেয়। তবে কক্সবাজার এমন একটি পর্যটন স্থান, যেখানে আপনি বছরের যে কোন সময় বেড়াতে যেতে পারেন। এখানের প্রকৃতি বাংলাদেশের আট দশটি স্থানের মত ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। তাই ভিন্ন স্বাদ দিতে শীত, বর্ষা বা শরতের নীল আকাশের মিতালি দেখার জন্য যেতে পারেন কক্সবাজার। যেতে পারেন হেমন্তের কোন এক পূর্ণিমার রাত উপভোগ করার জন্য। শীতকাল ছাড়া অন্য সময় গেলে অনেক কিছুতেই সুবিধা পাবেন। হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সব কিছুই কম খরচে উপভোগ করতে পারবেন।

কক্সবাজারের সূর্যাস্ত


কক্সবাজারে পিক সিজন অক্টোবর থেকে মার্চ। এ সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় পর্যটকের সমাগম বেশি হয়। এছাড়াও, সমুদ্র সৈকতটি শীতকালে আরো মনোরম হয়ে উঠে, কিন্তু তখন লোকসমাগম অনেক বেশি হয়। তবে সিজন ছাড়াও দুই ঈদের সময় এবং তিন দিনের সরকারি বন্ধে অনেক ট্যুরিস্ট থাকে কক্সবাজারে। এই সময় আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যাওয়া উচিৎ। অফ-সিজনে হোটেলগুলি ৩০% থেকে ৬০% পর্যন্ত লেস দিয়ে থাকে। এছাড়াও, বর্ষায় সমুদ্র ঢেউগুলো বিশাল হয়ে থাকে, যা দেখার মত একটি দৃশ্য। তবে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ সাধারণত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে। সেন্টমার্টিন যেতে চাইলে ওই সময়ে যেতে পারেন।

কক্সবাজারে যাতায়াত ব্যবস্থা

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যেতে পারবেন। সৌদিয়া, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী, সোহাগ পরিবহন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা ভাড়া পরবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং  চট্টগ্রাম বহদ্দার হাট থেকে কক্সবাজার, এভাবেও যেতে পারেন। ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগতে পারে  প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা। এছাড়াও ট্রেন ও বিমানেও যেতে পারেন। 

কক্সবাজার হোটেল

কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে প্রায় ১৫ লক্ষ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং আগে থেকে বুকিং না দিলেও কোন  সমস্যা নেই। কক্সবাজার যেয়েও হোটেল বুকিং দেয়া যাবে। তবে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির দিকে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি  থাকে, তখন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল। নাহয় হোটেল পেতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হোটেল রুম ভাড়া নিতে পারবেন। ভাড়া নির্ভর করবে হোটেলের কোয়ালিটির উপর। বিচ থেকে যত দূরে থাকবেন হোটেল ভাড়া তত কমে পাবেন। ভাড়া নেয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিবেন সময় কতটা থেকে কতটা পর্যন্ত। নাহয় আপনার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হতে পারে।

মনে রাখবেন কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া অফসিজনে অর্ধেকেরও বেশী ছাড়ে পাবার সম্ভাবনা থাকে। সুযোগ থাকলে কক্সবাজার নেমে একজন যেয়ে হোটেল ম্যানেজারের সাথে দরদাম করে হোটেল খুজে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। রিকশা বা সিএনজি ড্রাইভারের পরামর্শে কক্সবাজারে হোটেল বুকিং করতে যাবেন না। এখন প্রায় সব হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইট রয়েছে, সেখান থেকে নাম্বার নিয়ে আগে যোগাযোগ করেও যেতে পারেন। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী পর্যন্ত, এই সময়টাতে কক্সবাজারের হোটেলে থাকতে আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

কক্সবাজারে হোটেলের পাশাপাশি কিছু ফ্ল্যাটও ভাড়া পাওয়া যায়। আপনি যদি বড় পরিবার নিয়ে যান, এ ধরণের ফ্ল্যাট আপনার জন্য বেশী উপযোগী হতে পারে। ২/৩/৪ বেড রুম এসি/নন এসি, রান্নাঘর সহ এ ধরণের ফ্ল্যাটের ভাড়া পড়বে ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।

কক্সবাজারে খাওয়ার ব্যবস্থা কোথায় কিভাবে করতে হবে তাও জেনে নিতে পারেন। খাওয়ার আগে অবশ্যই দাম জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করবেন না। নাহয় খাওয়ার পর আপনার থেকে বেশি টাকা আদায় করতে পারে। খাওয়ার আগে তাদেরকে খাবারের মেনু দেখাতে বলেন। সেই মেনু লিস্ট থেকে দাম ও কি কি সুবিধা রয়েছে জেনে নিন। তাহলে আর আপনাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। 

সর্তকতা:

* কক্সবাজারে কোন সমস্যা হলে টুরিস্ট পুলিশকে জানান।
* জোয়ার ভাটার সময় জেনে সমুদ্রে নামুন।
* কিছু খাওয়ার আগে অবশ্যই দাম জিজ্ঞেস করেনিন।
* ফটোগ্রাফারদের থেকে ছবি না তুলাই ভালো, তুললেও দাম এবং কতগুলো ছবি উঠাবেন বলেনিন।
* সন্ধার পরে বিচে না থাকাই ভালো। 
* কক্সবাজারে হোটেল রুম বুকিং দেয়ার সময় জেনে নিন সময় কতটা থেকে কতটা পর্যন্ত অবস্থান করা যাবে?

আরও পড়ুন: মেঘের রাজ্যে ভ্রমণ করতে হলে, যেতে হবে সাজেক ভ্যালিতে। পর্যটন স্থান সাজেক ভ্যালির বিস্থারিত ভ্রমণ গাইড

 

About the Author

আমাদের এই ওয়েব সাইটে জানা ও অজানা, ভ্রমণ, রেসিপি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরামর্শ, বিভিন্ন প্রাকারের হিসাব নিকাশ ও আবেদন, ভূমি জরিপ এবং দৈনন্দিনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য দিয়ে থাকি। এই সকল তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কালেক্ট করা হয়।
কুকি সম্মতি
এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে একটি ভালো ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দিতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে, আপনি কি কুকিজ ব্যবহারে সম্মত আছেন?
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.