দেশে হু হু করে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এই বছর ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশই 'ডেন-৩' টাইপ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তাই ভয়টাও বেশি। ডেঙ্গু জ্বর বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। শুরু থেকেই সতর্ক থাকলে মৃত্যু ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। অতএব, এটা জরুরী যে, ডেঙ্গু জ্বরকে মাথায় রেখে, যে কোন ধরনের জ্বর আসলেই রোগীকে বাড়িতেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
“এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, তাই জ্বরকে উপেক্ষা করা উচিত নয়” বললেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ। জ্বর হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ।
তিনি বলেন, যারা ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেছেন তারা বেশিরভাগ জ্বরকে অবহেলা করেছেন। যদি জ্বর, সর্দি, কাশি, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা অন্য কিছুর সাথে যুক্ত থাকে, তবে এটি ডেঙ্গু ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। তবে আপনাকে জ্বরের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
পর্যাপ্ত বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারি রোগ নিয়ন্ত্রণ বা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ডাক্তার সানিয়া তাহমিনা বলেন, “যদি আপনার জ্বর হয় তাহলে আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে।” তিনি জ্বর নিয়ে এদিক ওদিক দৌড়ঝাঁপ না করার পরামর্শ দেন। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যে পরিমান পরিশ্রম করেন তা না করার কথা বলেন। আপনার সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন।
কী খেতে হবে
প্রচুর তরল খাবার খান। উদাহরণস্বরূপ, কচি ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত এবং ওরস্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা প্রয়োজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে। তবে এমন নয় যে আপনাকে শুধু প্রচুর পানি পান করতে হবে, বরং আপনাকে পানিযুক্ত খাবার খেতে হবে।
যেসব ঔষধ খাওয়া যাবে
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে শুধু প্যারাসিটামল গ্রহন করতে পারেন, উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ৬ঘন্টা পরপর প্রতিদিন চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারে।সর্বোচ্চ প্রতিদিন চার গ্রাম প্যারাসিটামলের ডোজ গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু যদি একজন ব্যক্তির লিভার, হার্ট এবং কিডনির সমস্যা থাকে, তাহলে তাকে কতটুকু পরিমান প্যারাসিটামল খাওয়ানো যাবে তা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
সতর্কতা
ডেঙ্গু জ্বরের কারণে শরীরে ব্যথা থাকলে অ্যাসপিরিন বা ব্যথানাশক জাতীয় মেডিসিন গ্রহণ করা যাবে না। অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রাহণ করলে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তার কারণ নেই
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ডেঙ্গু জ্বর হলে প্ল্যাটিলেট নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এটি ডাক্তারের উপর ছেড়ে দেওয়া ভাল বলে উল্লেখ করেন। সাধারণত একজন ব্যক্তির রক্তে প্ল্যাটিলেট গণনা হয় ১.৫ লক্ষ থেকে ৪.৫ লক্ষ পর্যন্ত। তবে ৪০ হাজারের নিচে আসলে তাকে রেড এলার্ম ধরা হয়।
এডিস মশা কখন কামড়ায়
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী যে এডিস মশা, সেই এডিস মশা সাধারণত অন্ধকারে কামড়ায় না। এডিস মশা ভোর ও সন্ধ্যার কিছু আগে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাধারণত সন্ধ্যা ও ভোরবেলা এডিস মশা কামড়ায়। এই সময়টাতে একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
যে সব স্থানে এডিস মশা জন্মায়
এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে সাধারণত। তাই একে ভদ্র মশা বলা হয়ে থাকে। তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে কোন স্থানে এই পানি জমে থাকতে পারে। এডিস মশা বংশবিস্তারের প্রধান স্থান হচ্ছে, বাড়ির ছাদ, ফুলের টব, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থান অথবা রাস্তার পাশে টায়ার বা অন্যান্য পাত্রে সংরক্ষিত পানি।
যাদের জন্য বেশি ঝুঁকি
১ বছরের কম বয়সের বাচ্চা বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভবতী মহিলা, হৃদরোগ বা হার্টের রোগি, ডায়াবেটিস এবং ডায়ালাইসিস রোগী। এই রোগীদের প্রথম থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া কার্যকরী উপায়
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট বা ইলেকট্রিক শক লাগলে তৎক্ষণাৎ যা করবেন এবং যা ভুলেও করতে যাবেন না