নতুন পোষ্টের বিজ্ঞপ্তি পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন!

ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ এবং যেভাবে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন


স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ এবং যেভাবে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন
স্তন ক্যান্সার

বিশ্বে স্তন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশেও আশংকাজনক হারে স্তন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্বে প্রতি আটজন নারীর একজন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। পুরুষরাও এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে পুরুষদের চেয়ে নারীরা বেশি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি-এর তথ্য সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন এবং ৬ হাজার ৭৮৩ জন মৃত্যুবরণ করেন। বিভিন্ন ধরনের নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে  ১৯% নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ৮.৩% স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ।

বাংলাদেশে নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে  স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়, তখন সেই অস্বাভাবিক কোষগুলি পরবর্তীতে টিউমারের আকৃতি লাভ করে। সেই টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।

যখন রক্তনালী, লসিকা (কোষ-রস) এবং অন্যান্য সিস্টেমের মাধ্যমে সেটি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখন এটি ক্যান্সারের রূপ লাভ করে । 

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেকোনো নারীর স্তন ক্যান্সার হতে পারে। তবে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা পুরুষ স্তন ক্যান্সার রোগীও পাচ্ছেন। অনেক নারী-পুরুষ তাদের স্তন ক্যান্সারের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চান না, তারা লজ্জাবোধ করেন। আর সে কারণেই ডাক্তাররা বাড়িতে বসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। তবে আশার কথা হল, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়। 

অধ্যাপক ডা. নাজনীন নাহার বলেন, “বাংলাদেশে যেহেতু স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে, তাই দেখা যায়, যারা চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের বেশিরভাগই শেষ পর্যায়ে আসেন। বেশিরভাগ সময় তারা স্তনে চাকার মত হওয়ার পর আসেন। অনেকের সাদা রস নিঃসৃত হতে থাকে স্তনের বোঁটা দিয়ে । অনেকের স্তনবৃন্তে ঘা বা ক্ষত বা স্তনবৃন্তের  চারপাশে চুলকানির লক্ষণ নিয়ে আসেন । খুব কমই তারা স্তনে ব্যথা বা স্তন লাল হয়ে গেছে এমন লক্ষণ নিয়ে আসেন।”

ডা. নাজনীন নাহার বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশে বাড়ছে। তবে আগের থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে, এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত চিকিৎসকের  শরণাপন্ন হচ্ছে।

স্তন ক্যান্সার হওয়ার কারণ:

আমাদের জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভাসে অনেক পরিবর্তন এসেছে, এটিও একটি অন্যতম কারণ। কারো স্তন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে এটি হতে পারে। যদি কেউ বারো বছর বয়সের আগে ঋতুবতী হয় এবং দেরীতে মাসিক বন্ধ হয়, তারা বেশি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। একই সাথে, তেজস্ক্রিয়তা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় বলেন অধ্যাপক নাজনীন।

ডা. নাজনীন নাহার আরও বলেন, যারা দেরি করে সন্তান নেয়, যাদের সন্তান হয় না বা যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না, যাদের খাবারে শাক-সবজি বা ফলমূলের চেয়ে মাংশ ও চর্বি জাতীয় খাবারের পরিমান বেশি থাকে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খান এবং যাদের ওজন বেশি, তারা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি। তাদেরও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাচ্ছেন বা হরমোন ইনজেকশন নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। এই ঝুঁকি  বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর থেকে বেশি থাকে। তাই ৫০ বছর যাদের, তাদেরকে একবার চিকিৎসকের নিকট গিয়ে ম্যামোগ্রাম অবশ্যই করা উচিত। যারা স্তন বিশেষজ্ঞ, তারা ম্যামোগ্রাম এর মাধ্যমে পরবর্তীতে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা থাকলে সেটাও বুঝতে পারেন। তিনি বলেন, প্রথম দিকে ধরা পড়লে স্তন ক্যান্সারের শতভাগ নিরাময় সম্ভব। তিনি আরও পরামর্শ দেন যে, ৩০ বা ৩৫ বছর বয়সের পর সব নারীরই নিয়মিত নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা উচিত। এর জন্য মূলত তিনটি উপায় রয়েছে। 

১) নিজেই নিজের স্তন নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা করা।
২) নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে স্তনে চাকা বা পিণ্ড আছে কিনা ডাক্তার দ্বারা পরীক্ষা করানো।
৩) ম্যামোগ্রাম এক্স-রে করানো, যা স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। 

নিজেই নিজের স্তন যেভাবে পরীক্ষা করবেন:

এই পরীক্ষাটি খুবই সহজ এবং যে কোন নারী তার গোসলের সময় এটি পরীক্ষা করতে পারেন। বৃদ্ধাঙ্গুল ব্যতীত, অন্য চারটি আঙুল একসাথে স্তনে চেপে দেখতে হবে যে অস্বাভাবিক কিছু বুঝা যাচ্ছে কিনা। তারপর হাতটি স্তনে ঘড়ির কাঁটার দিকে বা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে স্পর্শ করতে হবে। যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই পিণ্ডের নেয় অস্বাভাবিক কিছু অনুভব হবে। এই পরীক্ষা করার সময় হাতের তালু বাঁকা করা যাবে না, হাতের তালু সোজা রাখতে হবে। এটি যেকোনো সময় করা যেতে পারে। তবে ঋতুস্রাবের ৭ দিন আগে বা ৭ দিন পর এই পরীক্ষা করলে স্তনে চাকা থাকলে, তা সহজেই বুঝা যাবে।

এছাড়াও, আপনি যদি সাবান পানিতে ভিজিয়ে স্তনের চারপাশে সার্কেল করেন তবে বোঝা যাবে স্তনে চাকা আছে কিনা। এই পরীক্ষাগুলি সাধারণত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে করলে বুঝতে সুবিধা হয়। এজন্য সকল নারীদের এই জ্ঞান দেওয়া দরকার যাতে তারা স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে নিজেরাই বুঝতে পারে এবং ডাক্তারের কাছে আসতে পারে।


কখন ডাক্তারের নিকট যাওয়া জরুরী?

* স্তনবৃত্ত দিয়ে অতিরিক্ত রস বের হলে।

* স্তনে চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হলে।

* বোঁটা বাঁকা হয়ে গেলে বা ভেতরে ঢুকে গেলে।

* স্তনের রং পরিবর্তন হলে।

* বাহুমূলে চাকা চাকা বা পিণ্ড অনুভূত হলে।

আরও পড়ুন: গরম পানিতে গোসল, স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর! কিভাবে ক্ষতি এড়ানো যাবে?

আরও পড়ুন: শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন এবং আপনার সোনামনির খাবার ও পোশাকে যেসব খেয়াল রাখা জরুরী


About the Author

আমাদের এই ওয়েব সাইটে জানা ও অজানা, ভ্রমণ, রেসিপি, পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরামর্শ, বিভিন্ন প্রাকারের হিসাব নিকাশ ও আবেদন, ভূমি জরিপ এবং দৈনন্দিনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য দিয়ে থাকি। এই সকল তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে কালেক্ট করা হয়।
কুকি সম্মতি
এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে একটি ভালো ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা দিতে কুকিজ ব্যবহার করে। আমাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে, আপনি কি কুকিজ ব্যবহারে সম্মত আছেন?
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.