শীতে সোনামনিদের ত্বকের যত্ন

শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নেয়া জরুরী। আর শীতে শিশুরা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে ঘাবড়ানোর কোন কারণ নেই, এ সময় শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিলে শীতেও আপনার সোনামণি থাকবে সুস্থ। শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে কিছুটা সচেতন থাকলে অনেক চর্মরোগ প্রতিরোধ করা যায়। শীতকালে বাচ্চাদের বিশেষ যত্নের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু স্বাস্থ্যের সহকারী অধ্যাপক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এমডি আতিয়ার রহমান বলেন, শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতকালে শুষ্ক ও ধূলিময় আবহাওয়ার কারণে শিশুরা মূলত এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন

সোনামনিদেরকে ঠান্ডা বাতাস ও ধুলাবালি থেকে সাবধানে রাখতে হবে। যেহেতু শীতকালে সর্দি-কাশি, জ্বরের মত রোগ বেশি ছড়ায়, তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগম থেকে দূরে রাখাই ভালো। রুমাল, তোয়ালে, গামছা ইত্যাদি শিশুদের জন্য আলাদা রাখতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি বা কাশি দিলে শিশুদের দূরে রাখতে হবে। আপনার বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বা বাড়ির বাহিরে ঘুরতে যাওয়ার সময় মাস্ক পরার অভ্যাস করুন। এ ধরনের সমস্যা হলে শিশুকে আদা লেবুর চা, কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া, মধু, তুলসী পাতার রস ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন। তবে সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের নিকট যেতে হবে।

বাচ্চাদের শীতের পোশাক কেমন হবে?

শিশুদের উলের পোশাক পরানো উচিত। ডাক্তারি পরামর্শ মতে, শিশুদের সরাসরি পশমী পোশাক পরানো ঠিক নয়। পশমী পোশাক শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বাচ্চাদেরকে সুতি কাপড়ের উপর, উলের পোশাক পরানো ভালো এবং পোশাকটি নরম কাপড়ের হওয়া উচিত। কারণ খসখসে বা অমসৃণ পোশাক শিশুদের নরম ত্বকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কাপড় যেন বেশি টাইট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। হালকা শীতে শিশুর পোশাক যেন খুব বেশি মোটা না হয়। কারণ অতিরিক্ত উষ্ণ ও মোট কাপড় পরলে শিশুর শরীর গরম হয়ে ঘামতে পারে এবং ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। মনে রাখবেন শীতের ঠান্ডা থেকে, গরমের কারণে যে ঘাম হয়, সেই ঘামের কারণে যে ঠান্ডা হয়, সেই ঠান্ডা শীতের ঠান্ডা থেকে বেশি মারাত্মক। বাচ্চাদের রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফুল হাতা পোষাক পরা উচিত। যেসব কাপড়ে শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা হয়, পরবর্তী সময়ে ওই উপাদানের পোশাক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

কুসুম গরম পানির ব্যবহার

শিশুদেরকে হালকা গরম পানি পান করানো এবং কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়ানোসহ বিভিন্ন কাজে হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকাংশে ভালো থাকবে। শীতকালেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় বেশি গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। বেশি গরম পানির ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার না করলেও চলবে। গোসল শেষে একটি নরম শুকনো সুতির কাপড় দিয়ে পানি ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। যাতে পানি কোনো জায়গায়, বিশেষ করে শরীরের ভাঁজে আটকে না যায়। কারণ, এ থেকে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। তবে নবজাতক বা শিশুর সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে গোসল না করিয়ে, গরম পানিতে একটি কাপড় ভিজিয়ে সারা শরীর মুছে দেয়া ভালো। অনেকে শিশুকে সরিষার তেল বেশি করে মেখে গোসল করান, যা একদমি ঠিকন নয়। এতে গোসলের পরও শিশুর চুল ভেজা ও ঠান্ডা থাকে, ফলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

শিশুদের খাবারে দিকে খেয়াল রাখা

শীতকালে শিশুদের খাবার চাহিদা কমে যায়। ফলে তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। এজন্য তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে পুষ্টিকর ফলের রস, ডিমের কুসুম এবং সবজির স্যুপ খাওয়াতে হবে। বিশেষ করে বিট, গাজর, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এ ছাড়া শীতে বিভিন্ন ধরনের সবজির পাওয়া যায়, সেই সবজি দিয়ে খিচড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। এ সময় শিশুদের কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার খাওয়ানো যাবে না।

শিশুর ত্বকের যত্ন

শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। শীতে তাদের ত্বক আরও বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক হলে চুলকানি, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। তাই শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখতে যত্ন নেওয়া জরুরি। শিশুর মুখে ও শরীরে বেবি লোশন, অলিভ অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। বড়দের জন্য ব্যবহৃত লোশন ও গ্লিসারিন শিশু বাচ্চাদের শরীরে ব্যবহার করা যাবে না। যেসকল লোশন, অয়েল ও গ্লিসারিন আপনার বেবির শরীরের সাথে ম্যাচ করে, সেগুলো ব্যবহার করুন। বাজারে নকল পণ্যের ছড়াছড়ি, তাই শুধু ভালো ব্রান্ড দেখলেই কেনা যাবে না, আসল নকল যাচাই করে কিনতে হবে। নাহয় আপনার বেবির ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। শিশুর একবার কোন সাবান বা লোশনে অ্যালার্জি হলে সেই উপাদান থেকে তৈরি সাবান ও লোশন আর ব্যবহার করা যাবে না।

 

রেফারেন্স:
যুগান্তর